পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে পাথর শ্রমিক আহত

শেয়ার করুন
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলায় মহানন্দা নদীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে হুমায়ূন ফরিদ (২৪) নামে এক পাথর শ্রমিক আহত হয়েছেন।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ৭৩১ মেইন পিলারের ৭ আর সাব পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হুমায়ূন ফরিদের বাড়ি উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের জায়গীর জোত এলাকায়। তিনি ওই এলাকার তমিরুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনার পরপরই প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায় বিজিবি। পরে বুধবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ৭৩২ মেইন পিলারের ১ এস সাব পিলার এলাকায় ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহফুজুল হক ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট এস এস শিরোহীসহ বিজিবি-বিএসএফের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে স্থানীয় পাথর শ্রমিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে নদীতে নামেন হুমায়ূন ফরিদ নামে ওই পাথর শ্রমিক। পরে নদীতে পাথর উত্তোলনের প্রস্তুতি নেওয়া মাত্রই নদীর বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে ওই পাথর শ্রমিকদের পায়ে গুলি করে পালিয়ে যান ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের মহানন্দা ক্যাম্পের এক বিএসএফ সদস্য। এসময় গুলিটি ওই পাথর শ্রমিকের ডান পায়ে লেগে বাঁ পা দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে নদীর পানিতে লুটিয়ে পড়েন পাথর শ্রমিক ফরিদ। পরে তাকে স্থানীয় পাথর শ্রমিকদের সহায়তায় পরিবারের সদস্যরা দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন।
স্থানীয় পাথর শ্রমিক তরিকুল ইসলাম (২৩) বলেন, আমি ফরিদসহ কয়েকজন মিলে দীর্ঘ ১৫ দিন পরে মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে যাই। নদীতে নেমে পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু করা মাত্রই বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে বিএসএফের দুই সদস্য। এসময় তারা ফরিদের পায়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে আমরা ভীত হয়ে পড়ি। পরে ফরিদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।
ফরিদের ফুফু রহিমা আক্তার (৪৫) বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের এখানকার সবাই নদীতে পাথর তুলে জীবিকা চালায়। আজ (বুধবার) আমার ভাতিজার পায়ে গুলি লেগেছে। তার সংসার এখন কীভাবে চলবে।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য জামিরুল ইসলাম বলেন, আমি সকালে শুনতে পাই এক পাথর শ্রমিককে গুলি করেছে বিএসএফ। পরে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। আমি বর্তমানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরিদের সঙ্গে রয়েছি। তার দুই পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ।
১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহফুজুল হক বলেন, আমি সংবাদ পাওয়া মাত্রই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে এ নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় কোনো বিএসএফ সদস্য জড়িত আছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে সীমান্তে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে তারা।